টাইমস আপ আন্দোলন
টাইমস আপ । অনেক হয়েছে, এখনই সময়। হলিউডে বিনোদন মাধ্যমসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে শুরু হয় এ আন্দোলন।
এতে একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেন তিনশ’রও বেশি অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক। সবাই মিলে এই পদক্ষেপের নাম দেন ‘টাইমস আপ’। নামকরা ম্যাগাজিন টাইমস-এ আন্দোলনের ঘোষণা ছাপান তারা।
কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার অনেক নারী তাদের কথা বলার সুযোগ পায় না। অনেকে আবার অর্থের অভাবে নিতে পারে না কোনো পদক্ষেপ। সেসব নারীকে সাহায্য করবে এই ‘টাইমস আপ’।
আইনী প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন কাজে আর্থিক সাহায্যের জন্য শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ। ১৫ মিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য পুরণে মাঠে নামেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাটালি পোর্টম্যান, কেট ব্ল্যানচেট, এমা স্টোনসহ অনেকে।
এরই মধ্যে তারা সংগ্রহ করে ফেলেন ১৩ মিলিয়ন ডলার। কাজ চলছে পুরোদমে। আর এ-সংবাদ গত ২ জানুয়ারির।
‘টাইমস আপ’ আন্দোলনকে অনেকে বলছেন ‘বৈষম্যের আন্দোলন’।
সম্প্রতি হলিউডের একাধিক প্রযোজক-পরিচালকের নামে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছেন সবাই।
বিশেষ করে, হলিউডের বিনোদন মাধ্যমে কাজ করা নারীরা। ২০১৭ সালজুড়েই টুইটার-সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম ছিল হলিউড অভিনেত্রীদের অভিযোগে।
এ-বছরের (২০১৮) মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে বলিউডে।
আগে-পরে অনেকেই অভিযোগ করলেও, শক্তিমান অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্তের অভিযোগের পরে অনেকেই এ-বিষয়ে কথা বলেন।
ভেঙে পড়তে থাকে অনেক শ্রদ্ধার আসন। এদিকে বলিউডের ১১ নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ভারতের চলমান ‘#মি টু’ আন্দোলন নিয়ে লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা জানিয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁদের সঙ্গে কাজ করবেন না ১১ নির্মাতার কেউই।
এ তালিকায় আছেন : অলংকৃতা শ্রীবাস্তব, গৌরী শিন্ডে, কিরণ রাও, কঙ্কণা সেন শর্মা, মেঘনা গুলজার, নন্দিতা দাস, নিত্য মেহরা, রীমা কাগতি, রুচি নারায়ণ, সোনালী বোস ও জোয়া আখতার।
এবার মাঠে নেমেছে গুগলের নারী কর্মীরা। যদিও এরই মধ্যে যৌন হেনস্তার অভিযোগে ৪৮ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে গুগল।
২
কানে ‘# মি টু’ আর ‘টাইমস আপ’ আন্দোলন
এ-বছর (মে ২০১৮), কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭০ বছরের ইতিহাসে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এতটা বড় হয়ে আসেনি।
গত বছর (২০১৭) থেকে হলিউডে একের-পর-এক যৌন হয়রানির কেচ্ছা বেরিয়ে আসার পর পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন হয়ে যায়।
প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের হাতে চার অভিনেত্রী কান উৎসবে এসেই হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন।
সে-কারণে গত অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, গ্র্যামি পুরস্কারের মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭১তম আসরেও ‘# মি টু’ এবং ‘টাইমস আপ’ আন্দোলনের জের অব্যাহত থাকে।
ক্ষুব্ধ অভিনেত্রীদের দেখা যায় লালগালিচায়।
এমনকি এই প্রতিবাদে যোগ দেন প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান বিচারক হলিউড অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। তাঁর সঙ্গ দেন অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট।
কানের সেরা ছবির বিচারে এবারই সবচেয়ে বেশি নারী বিচারক দেখা যায়।
নয় সদস্যের প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরিবোর্ডে ছিলেন কেট, ক্রিস্টেনসহ পাঁচ নারী। তবে উৎসবের বিরুদ্ধে এবারও উঠে ‘সেক্সিজম’-এর অভিযোগ।
বেশি বিচারক থাকলেও, প্রশ্ন উঠে প্রতিযোগিতা বিভাগে নারী নির্মাতার ছবি কম কেন।
২১টি ছবির নির্মাতাদের মধ্যে নারী নির্মাতা ছিলেন মাত্র ৩ জন। প্রধান বিচারক কেট ব্ল্যানচেট বলেন, জুরিতে অনেক নারী আছেন ঠিক, কিন্তু প্রতিযোগিতায় আরও নারী থাকলে ভালো হতো।
তিনি আরও বলেন, এটা সত্যি যে পরিস্থিতি বদলেছে। কিন্তু সত্যিকারের বৈচিত্র্যের জন্য আরও অনেক নারীর অংশগ্রহণ লাগবে।
কান উৎসবে নারীদের এমন প্রতিবাদ এবারই প্রথম ছিল, তা নয়।
এর আগে লালগালিচায় অভিনেত্রীরা কী পোশাক পরবেন, হিলওয়ালা উঁচু জুতা পরবেন কি পরবেন না, এসব বিতর্ক হয়েছে।
তবে হার্ভি-কাণ্ডের পর বিতর্ক রম সীমায় পৌঁছে।
স্কটিশ চিত্রনাট্যকার কেইট মুওর কানকে ‘দুই সপ্তাহের পুরুষ বুদ্ধি ও নারী সৌন্দর্যের’ উৎসব বলে অভিহিত করেন।
হার্ভি-কাণ্ডের পর কান উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমোও বলতে বাধ্য হন, কান আর আগের মতো কখনোই থাকবে না।
তাই হয়তো উৎসব কর্তৃপক্ষ এবার নারীদের জন্য প্রথমবারের মতো খুলেছে হেল্পলাইন।
ট্রিয়ারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ
কিন্তু ফ্রেমোর আরেকটি পদক্ষেপ খেপিয়ে তোলে প্রতিবাদকারীদের। তিনি ডেনমার্কের নির্মাতা লার্স ফন ট্রিয়ারের ওপর থেকে সাত বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায়।
এতে অবাক হন অনেকে, কারণ ট্রিয়ারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল যৌন হয়রানির। ট্রিয়ারের ছবিটি মনোনয়ন পায় ‘আউট অব কম্পিটিশন’ বিভাগে।
তথ্যসূত্র : এএফপি, প্রথম আলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য