
ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক মহীরূহই ছিলেন ইরফান খান। তার মৃত্যু কাঁদিয়ে যাচ্ছে গোটা উপমহাদেশকে। অভিনয়কে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি
রোগের সঙ্গে হেরে অবশেষে চলে গেলেন বলিউড অভিনেতা ইরফান খান। বুধবার (২৯ এপ্রিল, ২০২০) সকালে তিনি মুম্বাইয়ের ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরও ইরফান খান হার মানেননি। বরং আরো বেশি করে জীবনকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। আর পারলেন না।
নিজেকে সমর্পণ করে দিলাম। এই কথাগুলোই ইরফান খান বলেছিলেন ২০১৮ সালে যখন তাঁর ক্যানসারের কথা প্রকাশ্যে আসে এবং তাঁর লড়াই শুরু হয়। ইরফান খান মনের জোরে চলতেন, সাহসী মানুষ ছিলেন, শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর সংস্পর্শে যেসব মানুষ এসেছেন, তাঁদের সব সময় উদ্বুদ্ধ করতেন।
গত ২৮ এপ্রিল কোলনের সংক্রমণ নিয়ে কোকিলাবেন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। এর পরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে এবং একসময় সব চিকিৎসার ঊর্ধ্বে চলে যান তিনি। তাঁকে আর ফেরানো যায়নি। হাসপাতালে তাঁর পাশেই ছিলেন ইরফানের স্ত্রী সুতপা সিকদার এবং তাঁদের দুই ছেলে বাবিল ও আয়ান খান।
মাত্র তিন দিন আগে (২৫ এপ্রিল) ইরফান খানের মা মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তাঁর মা সাইদা বেগম। মায়ের মৃত্যুর এ সময়ে পাশে থাকতে পারেননি অভিনেতা ইরফান খান, শেষ দেখাও হয়নি। তবে ভিডিও কলে মায়ের দাফন কার্যক্রম দেখেছেন দূর থেকে। চার দিনের মাথায় মায়ের কাছেই যেন চলে গেলেন।
ইরফান খানের ১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুরে। এমএ পড়ার সময়েই ১৯৮৪ সালে পেয়ে যান ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় পড়ার জন্য স্কলারশিপ। ১৯৮৭-তে পড়াশোনা শেষ করে ইরফান মুম্বাই পাড়ি দেন। এর পর থেকে মঞ্চ এবং রুপালি পর্দা হয়ে ওঠে জীবনের ধ্যানজ্ঞান।
শুরুতে ‘চাণক্য’, ‘সারা জাহা হামারা’, ‘বনেগি আপনি বাত’ ও ‘চন্দ্রকান্তা’র মতো টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করেন। ১৯৮৮ সালের আগে মূলত টেলিভিশন সিরিয়াল ও থিয়েটারেই অভিনয় করেছেন ইরফান।
১৯৮৮ সালে ‘সালাম বোম্বে’ সিনেমায় অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব তাঁকে দিয়েছিলেন মীরা নায়ার। ১৯৯০-তে ‘এক ডক্টর কি মৌত’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এর পর তাঁর অন্য কয়েকটি সিনেমায় সেভাবে নজর কাড়েনি।
বেশ কিছু অসফল সিনেমার পর পটপরিবর্তন আসে লন্ডনের পরিচালক আসিফ কাপাডিয়ার হাত ধরে। কাপাডিয়া ইতিহাসভিত্তিক সিনেমা ‘দ্য ওয়ারিয়র’-এ তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দেন। ২০০১ সালে ‘দ্য ওয়ারিয়র’ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়।
আর এই সিনেমার হাত ধরে চলচ্চিত্রমহলে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ইরফান। ২০০৩ সালে শেকসপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে ‘মকবুল’ সিনেমায় নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেন ইরফান।
২০০৫ সালে ‘রোগ’ সিনেমায় বলিউডে তাঁকে প্রথমবার মুখ্য চরিত্রে দেখা যায়। এর পর বলিউডের একের পর এক সিনেমায় হয় তাঁকে প্রধান বা পার্শ্ব চরিত্র বা ভিলেনের ভূমিকায় দেখা গেছে।
২০০৭ সালে বক্স অফিসে হিট ‘মেট্রো’ সিনেমার জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব চরিত্রের পুরস্কার পেয়েছিলেন ইরফান। তাঁকে ‘আ মাইটি হার্ট’ ও ‘দ্য দার্জিলিং লিমিটেড’-এর মতো আন্তর্জাতিক সিনেমাতেও দেখা গেছে।
শুধু বলিউডই নয়, হলিউডেও নিজের প্রতিভা দেখিয়েছেন ইরফান। কাজ করেছেন একাধিক নামী পরিচালকের সঙ্গে। ‘স্লামডগ মিলেনিয়ার’, ‘লাইফ অব পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’, ‘দ্য আমেজিং স্পাইডারম্যান’–এর মতো হলিউড ছবিতে অভিনয় করেছেন ইরফান খান।
অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশের পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ ছবিতেও।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক মহীরূহই ছিলেন তিনি। ইরফান খানের মৃত্যু কাঁদিয়ে যাচ্ছে গোটা উপমহাদেশকে। অভিনয়কে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
—ডেস্ক রঙিনদুনিয়া